নিভৃত ফাহিমের তিনটি কবিতা
শহরের গল্প
মৃত মাছের মত করে ভাসছে নীরবতা,
আঁধারের কালো'তে জমছে সব ব্যথা।
কান্না'রা সব বোবা হয়ে গেছে শহরের চিৎকারে,
সুখের তরে ভিখিরিরা সব ছুটছে অনাহারে।
কলমে'রা সব মিছিল ডেকেছে নগরের রাস্তায়,
শব্দে'রা সব শ্লোগানে ব্যস্ত অসীম উচ্চতায়।
মেঘেদের সাথে সংসার পেতেছে একরাশ বিভীষিকা,
বিষন্নতার বৃষ্টিতে ভেজে নগর একা একা।
এই শহরের প্রেম গুলো সব নিয়েছে আজ ছুটি,
আকাশের রঙে উড়ছে বিষাদ একটি কিংবা দুটি।
পথ হারিয়ে পথের মাঝে শুয়ে আছে ছেলেবেলা,
নিয়মের ভিড়ে শেকলের টানে কাটছে দিন মেলা।
গুঞ্জন গুলো চাপা পড়েছে ক্রন্দনের ছায়াতলে,
মৃত্যু এসে ডেকে নিয়ে গেছে সবকিছু চিরতরে।
তবুও জীবন ছুটছে আজও মৃত্যুর পিছু পিছু,
বলতে চেয়েও বলে যায়নি সে না বলা কত কিছু।
প্রিয়ন্তি কন্যা
ধূসর মেঘ,এক কাপ চা আর কয়েকটি ভেজা রক্তজবা,
অভিমান করবে যদি এঁকে দেই কয়েকগুচ্ছ কবিতা?
ভোর রাতে গান শোনায়; ভেবেছি তুমি এমন কোনো কুহেলিকা,
বুঝিনি তুমি মনের বনের শব্দ মুখর করা অন্য এক প্রহেলিকা।
সন্ধ্যে নামার সময় তোমায় গল্পের পাতায় কবিতা হতে চেয়েছি,
সাঁজের সুবাস আমি পাইনি কেবল কেশের গন্ধে মেতেছি।
দেখিনি পরম ক্লান্তির ওপর ঝড়ে পড়া কোনো অকাল শ্রাবণ ঢল,
দেখেছি তোমার নাকের ফুলের ওপর একফোঁটা শিশির জল।
প্রিয় ফুল যেন বর্ষার জোছনায় মেতে ওঠে উল্লাসে, ডানা মেলে,
ঝরে পড়ে তোমার সবুজ শাড়ির আঁচলের কার্নিশে, হেলে দুলে।
কতটুকু প্রেম মিশে থাকে জলাধার ওষ্ঠের বাঁকা চাঁদে!
চুমুর জোছনায় জানিয়ে দাও তা আমার অন্ধকার মুখ ছাদে।
আলোকিত কর আমার অন্তর জুড়ে থাকা অগণিত অমানিশা,
শুকতারা হও আমার পথে, আঁধারে দেখাও আলো দিশা।
তুমি কি সেই বৃষ্টির জল, ঝড়ে পড়া শিউলি, হঠাৎ শ্রাবণ বর্ষণ?
এলোমেলো বাউন্ডুলে, হেয়ালি কবিতা আঁকতে বাধ্য করে যার দর্শন।
নিভৃতের কথা
চোখের নিচে মেঘ, চুলে বোশেখের ঝড়,
নাকের ওপর চশমাটা জানান দেয় এটা আমি।
বিষাদের গায়ে চুমু খেয়ে রাতের পর রাত কাটাই,
অনন্ত পরমের খোঁজে হাঁটি আমি,নেই থামা থামি।
বাক্য যার অগোছালো, শব্দগুলো এলোমেলো,
নিরর্থক প্রলাপ প্রমাণ করছে এটা আমি।
রাতের নিরবে কাঁচ পোকার গান আর নাচ দেখি,
স্বর্গের সুখ বেয়ে নরকের বনে নামি।
ভেঙ্গে ফেলা কয়েকটা স্বপ্ন,হাহাকারের চিত্রকর্ম,
রঙহীন কবিতার সুর জানান দেয় ওটা আমি।
বৃষ্টির শব্দের ভয়ে সূর্যের লুকোচুরি, পাতার কাঁপুনি,
বিহঙ্গের সুর শোনে যে অন্তর্যামী।
পথের শেষে ভাঙ্গা টেলিফোন বুথ থেকে
প্রেমিকার কান্না বলে দেয় ওটা আমি।
ছলনা, করুণা, মিছে গান আর বোবা ধর্ষণ,
প্রতিবাদের ভাষা নেই,তবু যে মুক্তিকামী।
মিথ্যে খচ্খচে র্যাপিং প্যাপারে বাঁধানো
উপহারটা বলে দেয় সেটা আমি।
প্রেমিকার হলুদে দাঁড়িয়ে সিঁদুর কৌটা,
লালের শাড়ি, অধিকার কেবল তুমি।
রাস্তার পাশে শুরু হওয়া কুকুরের ডাক
জানান দেয় অজ্ঞাত সেটা আমি।
ঢুলুঢুলু হেঁটে পথের বাঁকে স্মৃতি সাজাই,
জীবনেরর সাথে গল্প শেষে এবার একটু থামি।
পৃথিবীর তরে ঘৃণা ভরা কয়েকগুচ্ছ রাত
আর তিরস্কার নিশ্চিত করে, সবটাই আমি।
ব্যর্থতার সুতো দিয়ে কয়েক ফোঁটা কান্না জুড়ে,
জীবনকে চোখ রাঙাই; হ্যা, পুরোটাই আমি।
Post a Comment