সম্প্রীতির সমাজ গড়তে সংযম ও সহিষ্ণুতা কেন জরুরি | মো: হামিদ উদ্দিন

মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান
মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।

এই আত্মআবিষ্কারের মধ্য দিয়ে আত্মজাগরণের যে স্পৃহা কবি নজরুলকে প্রাণিত করেছে তা হলো, সাম্প্রদায়িক বিভেদমুক্ত সম্প্রীতির একটি ভিত্তিমূল। কবি এ ব্যাপারটি তার কৈশোর জীবন ও লেখক জীবনের সূচনালগ্নেই অনুভব করতে পেরেছিলেন। সম্প্রদায়গত বিভাজন এবং পরস্পর শত্রুতাকে উৎপাটন করতে হবে, তা না হলে পরাধীন জাতির মুক্তি আসবে না, মানবতার সুমহান চেতনাকেও প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। কবির মধ্যে এ দৃঢ় বিশ্বাস শিকড় গেড়েছিল গোড়া থেকেই।

একটি সমাজে তথা রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে। কেউবা মুসলিম, কেউবা হিন্দু,  কেউবা বৌদ্ধ আবার কেউবা খ্রিষ্টান। তেমনি বাংলাদেশেও হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর  সম্মিলিত বাস। মানব জাতি সভ্য হওয়ার সূচনালগ্ন থেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। সব কাজ একসাথে করত। সভ্য হওয়ার সাথে সাথে সেই একতাও  বৃদ্ধি পেতে থাকল।
সেই ঐকতার রেশ ধরেই বাঙ্গালী জাতি সমস্ত পরাশক্তিকে রোধ করে এসেছে। ইংরেজদের শাসনামল থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর শাসনামল  পর্যন্ত অদম্য ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালীকে এতটুকু টলাতে পারেনি। মুক্তিকামী বাঙ্গালী  স্বাধীনতা অর্জন এর জন্য লড়ে গেছে সবসময়।
বাঙ্গালী ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছে।

ভ্রাতৃত্ব-বন্ধুত্ব-সৌহার্দ এই তিনটির ফলে সু-সম্পর্কের পরিবেশ পাওয়া যায়।
যেখানে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধুত্ব-সৌহার্দ থাকে সেখানে হিংস্রতা ও পাষন্ডতা থাকতে পারে না। কিন্তু ধর্মের মধ্যে যে সম্প্রীতি তা কেন আজ ফিকে হয়ে আসছে.?

আজ থেকে ৪৭ বছর আগে যে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে পাকিস্তানী পিশাচদের বিরুদ্ধে, দীর্ঘ নয় মাস  রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানরাই মিলে তো বিজয় অর্জন করেছিল। সবার রক্তেই রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। তখন তো ভেদাভেদ ছিলনা বৈষম্য ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে ধর্ম নিয়ে কেন মাতামাতি হানাহানি হচ্ছে.?




আচ্ছা আমরা ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নেওয়ার সময় কখনো কি জিজ্ঞেস করেছি এই রক্তটা হিন্দু না মুসলিমের?
তবুও কেন এই বিদ্বেষ?

আমরা কি আবারো পারি না ভালোবাসা দিয়ে একে অপরকে সম্প্রীতির বাঁধনে বাঁধতে।
হ্যাঁ, আমরা পারি।
আমরাই পারি এই দেশকে সুন্দর ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে। তাই আবারো সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

No comments