‘ইমরুল হাসান’র ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’ নিয়া খুচরা আলাপ | কাউসার হামিদ জাওয়াদ

ছবিঃ মিথ্যাবাদী রাখাল --  ইমরুল হাসান

বইটা শুরুই হয় ইল্যুশনের মধ্য দিয়া। সামনের প্রচ্ছদে কবিতা এবং কবির নাম পড়বার পর বইতে ঢোকার জন্য পেইজটা উল্টাইলে দেখা যাবে পরের পৃষ্ঠাগুলি উল্টা! তো পড়ার জন্য আমরাও বইটারে উল্টাবো এবং সেই মুহূর্তেই আবিষ্কার করবো প্রথম পৃষ্ঠা হিসেবে যে পেইজের দিকে তাকায়া আছি, আসলে সেইটা বইয়ের লাস্ট পেইজ। সামনের পেইজে যাওয়ার জন্য ফিরা যাইতে হবে আপাতদৃষ্টিতে যেটারে আমরা ভাবছিলাম বইয়ের ব্যাক কাভার, সেখানে এবং বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার শুরু সেই কাভার উল্টানোর পরই।
আপনি আমি যেটারে ফ্রন্ট কাভার ভাইবা শুরুতে উল্টাইলাম, আসলে তা ফ্রন্ট কাভার ছিলই না, তা ছিল ফ্রন্ট কাভারের ইল্যুশন মাত্র, সত্যের বেশধারী মিথ্যা। আর যারে ভাবলাম ব্যাক কাভার, ব্যাক কাভার সে না, সে-ই তো ফ্রন্ট কাভার, মিথ্যার আঁচলে ঘোমটা দিয়া লুকায় থাকা সত্য। ফ্ল্যাপেও কবি বলতেছেন, ‘সত্যি তো আছেই আর তাঁর সাথে মিথ্যাও। যা সত্যি, সেইটা যে কেমনে সত্যি হয়া উঠে, দেখা তো যায়। আর মিথ্যাগুলিও দেখা যায়, বুঝা যায় বা ধারণা করা যায়।’ যেন পাঠকরে ধাঁধাঁয় ফেইলা নিজেই আবার তাঁর সমাধান দিলেন কবি। যেন ইল্যুশনের ভয় থেকা পাঠকরে নির্ভয় দিইয়া বইতে প্রবেশের আহ্বান জানাইতেছেন।
বইতে থাকা কবিতার বেশিরভাগেই আমরা চলতে থাকি সত্য মিথ্যা এবং এদের ধরতে না পারার মতন সিচুয়েশন ক্রিয়েট করা ইল্যুশনের সাথে যুঝতে যুঝতে -
‘একটা ভেড়ার গোঙানি, দূরে
ভাবতেছি, তাঁর গলা কামড় দিয়া ধইরা আছে বাঘ, রক্ত পড়তেছে...
অথবা আমি ঘুমায়া পড়ছি
সন্ধ্যার আগে;
বাঘ আইসা বলতেছে, ‘কি ব্যাপার, আবার স্বপ্ন দেখতেছো নাকি তুমি, আমারে?’

কিংবা-

‘মিথ্যার নদী সাঁতরাইয়া পার হইলাম
মিথ্যার পাহাড়ে উইঠা বইসা থাকলাম
মিথ্যার সাগর-পারে বইসা মিথ্যার সূর্যরে কইলাম, নিইভা যান…
মিথ্যার বৃষ্টিতে মিথ্যার রাস্তাতে হাঁটলাম
মিথ্যার সকালবেলায় নিজেরে একটা মিথ্যা বানায়া জাগায়া তুললাম…
মিথ্যার বাঘ আইসা বলবেন আমারে, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল!
আরো অনেক অনেক মিথ্যা আপনি বলেন আমারে
যেন তারা সত্যি হয়
এইরকম সুন্দর সুন্দর মিথ্যার মতোন!’

অথবা-

‘বাঘ বলে রাখাল’রে, আসো আমার ঘর গোছাই আমরা!
রাখাল কয়, আমার তো আছে গল্প-বলা, সারমন, ইমাজিনেশনের অনেকগুলি ভেড়া
আর তাদেরকে খাইয়া ফেলবা না তখন তুমি?
বাঘ কয়, তুমি খালি কনফিউজড কর। কই ভেড়া? কই ভ্যালি?
এইখানে তো আমরা রাস্তায় দাঁড়ায়া চা খাইতেছি!...’

সবশেষে, মিথ্যাবাদী রাখাল শুরু হইছে হযরত মোহাম্মদে (সাঃ)-রে কোট কইরা, “এমন কোন নবী নাই, যিনি মেষ চড়ান নাই” এবং বইতে কবিতার সংখ্যাও তের। ইংরেজি বর্ণমালায় তেরতম এ্যালফাবেট ‘M’, নবী মুহাম্মদের নামের আদ্যক্ষর। ব্যাপারটা কি ইচ্ছাকৃত? যদি ভাবি ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত, কিন্তু আসলে যদি ব্যাপারটা তা না হয়, তবে তো মিথ্যাটারেই সত্যি বইলা ধইরা নিতেছি। আবার যদি ভাবি অনিচ্ছাকৃত, কিন্তু আসল ঘটনা হয় উল্টা, তবে তো সত্যিটারেই ধরা নিতেছি মিথ্যা, ঠিক মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পের গ্রামবাসীদের মতো। আর আমাদের ধাঁধাঁয় ফালায়া নিশ্চই মিথ্যাবাদী রাখাল সাইজা মজা নিতেছেন কবি।

No comments