ঠাস বুনোটের ভিড়ে | আকবর হোসেন রবিন
ছবিঃ বন্ধন নাটকের ফ্রেম থেকে |
সময় একুশ শতকের সূচনালগ্ন। একুশে টিভি তখন উন্মুক্ত টেরিষ্টোরিয়াল টেলিভিশন কেন্দ্র হিসেবে সম্প্রচার শুরু করে। সেই সুবাদে গ্রামের মানুষের কাছে তখন বিটিভির পাশাপাশি একুশে টিভি দেখারও সুযোগ তৈরি হয়। একুশে টিভিতে কোন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে একটা টোন দেয়; ওটা খুব দারুণ। এই টোনের রেশ কাটতে না কাটতে শুরু হতো অর্ণবের কণ্ঠে বন্ধন নাটকের থিম সং ‘ব্যস্ত শহরে, ঠাস বুনোটের ভিড়ে, আজো কিছু মানুষ, স্বপ্ন খুজে ফেরে’। বন্ধন নাটকের ‘বন্ধন’ শুধু নামে নয়, এই নাটক আমাদের বাড়িতে কয়েকটা পরিবারকে আবদ্ধ করতে পেরেছিল খুব মজবুত বন্ধনে। নাটক শুরু হওয়ার পাঁচ দশ মিনিট আগে থেকে ছোট-বড় সবাই এসে হাজির হতো শাকিল ভাইয়াদের ঘরে।পড়ার টেবিলে আমাদের মন বসত না।
শুধু সময় গুনতাম কখন নয়টা বাজে। নয়টা বাজলে বইপত্র সব একদিকে রেখে দৌড়ে চলে যেতাম টিভির সামনে। এই যে না পড়ে টিভির সামনে এসে হাজির হতাম, এটার জন্য বাড়ির বড়রাও বকতো না। বন্ধন নাটক ছিলো সবার জন্য উন্মক্ত। এসময় পড়া-লেখা, খাওয়া-দাওয়া সহ অন্যসব কাজকর্মও বন্ধ থাকতো।
বন্ধন নাটকের থিম সং'র গায়ক অর্ণব |
সময় বদলায়। দিন-মাস-বছর-যুগ সব স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়। কতশত স্মৃতি জমা হয়। কিন্তু পারিবারের সবাই মিলে নাটক দেখার এমন স্মৃতি আর তৈরি হয়না। আমি প্রায় চেষ্টা করি হারিয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোর পুনরাবর্তন করতে। কিন্ত তা কি আর সম্ভব! তারপরেও যতটুকু পারি চেষ্টা চালিয়ে যাই। এইতো সেদিন হঠাৎ ইচ্ছে হলো, পরিবারের সবাইকে একত্র করে নাটক দেখব।
এখন বাংলা টিভি চ্যানেল গুলোর যে হাল অবস্থা, তাতে কোনভাবেই টিভিতে নাটক দেখা সম্ভব না। তাই আমি আমার ল্যাপটপে হুমায়ূন আহমেদের একটা নাটক চালু করে দিলাম। খেয়াল করে দেখলাম আম্মা,ভাবী,ছোটভাই সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে নাটকটা দেখছে। মন খারাপের মুহূর্তে মন খারাপ করে বসে থাকছে। হাসির দৃশ্যে সবাই হা হা করে হেসে উঠছে। এভাবে একদিন-দুইদিন-তিনদিন করে একটানা গত চৌদ্দ দিন ধরে আমার বাসায় হুমায়ূন আহমেদের নাটক চলছে। নাটক চলাকালীন সময়ে আম্মা জিঙ্গেস করছে, এটা হুমায়ূন আহমেদের বউ না? ছোট ভাই আম্মারে ভাবীরে একেক করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, ‘এটা হুমায়ূন আহমেদের বউ। এটা হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শীলা আহমেদ। এটা বাকের ভাই। এটা হিমু। হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে। তার বিছানাও হলুদ রঙের থাকে।’
আমি পিছনে বসে হাসি। ছোট্ট ভাতিজা আমার কোলে বসে নাটক দেখে। আর কিছুক্ষণ পরপর মাথা ঘুরিয়ে আমার মুখের দিকে তাকায়। আমি ভাতিজার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিই। সেও আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। তারপর হাততালি দেয়। আমি ভাবি, কি সুখ আমার! কি আনন্দ আমার! এমন আনন্দ ছেড়ে, সুখ ছেড়ে, আমি কেমন করে দূরে যাই!
Post a Comment