অদ্বিতীয় সত্যজিৎ ও কিছু কথা | হাসিবুল হোসাইন


সত্যজিৎ রায় নামটি শুনলেই মাথায় যে দুটো শব্দ সবার আগে আসে সেগুলো হলো- পথের পাঁচালী। বিভূতিভূষণের "পথের পাঁচালী" পড়ার সময় চোখের সামনে যেসব দৃশ্য ভেসে ওঠে, সেসব যেন বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন এ মহামানব নিজের হাতের ছোঁয়ায়। পৃথিবীতে এ একটি সিনেমাই আছে বোধহয়, যার কিনা বিন্দুমাত্র সমালোচনা শুনলেও মাথায় আগুন ধরে যায়। আর কেই বা চাইবে, যেখানটিতে নিজের সোনালী শৈশব অকল্পনীয় সৌন্দর্যের  সাথে ফুটে উঠেছে তার একটুখানি হলেও সমালোচনা শুনতে? সত্যজিৎ রায়ের একেকটি সিনেমা একেক লেভেলের ও ধাঁচের হলেও, বলাবাহুল্য, পথের পাঁচালী কেবল পথের পাঁচালীরই সমকক্ষ হতে পারে বোধহয়।
এতো গেলো কেবল "পথের পাঁচালী"-র কথা, "গুপি গাইন বাঘা বাইন" আর "হীরক রাজার দেশে"-র সত্যজিৎ রায়কে দেখে কোন মানুষের আনন্দ লাগবে না? কি অপূর্ব সৃষ্টির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, এক নিতান্তই সরল-সাদাসিধা সমাজের মাধ্যমে গোটা রাষ্ট্রকাঠামোর প্রচণ্ড ব্যর্থতার, আর সাথে একনায়কতন্ত্রের পরাজয়ের অপূর্ব চিত্র!
প্রত্যন্ত গ্রামবাংলা থেকে শুরু করে আধুনিক শহুরে সমাজের সম্পর্কের জটিল হিসেব-নিকেশের সুন্দর সমীকরণ সবার সামনে তুলে ধরার জন্যেই বোধহয় সত্যজিৎ রায় অনন্য। এর পাশাপাশি, বাঙালীর রহস্যময় জীবনে আজীবন খোরাক জুগিয়ে যাবেন প্রফেসর শঙ্কু, কিংবা মহামতি ফেলুদা, ব্যোমকেশ। 
বাঙালীর তাই চলচ্চিত্রজুড়ে আছেন এক অদ্বিতীয় সত্যজিৎ রায়, সে সুন্দর শৈশব নিয়ে হোক, রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক জীবন নিয়ে হোক, গ্রাম কিংবা শহুরে জীবনের চালচিত্র নিয়ে হোক। শুরু করেছিলেন পথের পাঁচালী থেকে, যার শেষ দেখেছে বিশ্ব আগন্তুক  র হাত ধরে। কিন্তু আদতে এ স্রষ্টার শেষ বলতে কিছু নেই, অমর হয়ে থাকুক সত্যজিৎ আর তাঁর সৃষ্টি, হাজার হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকুক বাঙালীর, বিশ্ববাসীর মননে-প্রাণে।



No comments