অঞ্জন ও ইতিবৃত্ত | আনিসুজ্জামান নূর


মাত্র কৈশোরে পা দেয়া ছেলেটা কলেজ ফিরতি পথে সিরাজুদ্দৌলা রোড দিয়ে হেঁটে হেঁটে আন্দরকিল্লা পৌছায় কিংবা সদ্য কৈশোর পেরোনো ছেলেটা সারা রাত টিএসসি তে হেঁটে হতাশা ক্রস করে নিঃসঙ্গ বাদামতলায় গিয়ে বসে কিংবা হঠাৎ গান কে ভালবাসতে থাকা ছেলেটা ঘন্টার পর ঘণ্টা হেডফোন কানে নিয়ে বসে থাকে, তাদের বুকে থাকে কষ্ট কিংবা হতাশা মাখানো একটা সময়। এ সময় টার কথা আপনি যখন ভাবছেন তখন আপনার কানে হঠাৎ করে ভেসে উঠল -- 

"কানে বাজে এখনো পুরনো পিয়ানোর ঝঙ্কার নিকোটিনে হলদে হয়ে যাওয়া দশ টা আঙ্গুল"
কিংবা সদ্য বুক ফোটা মেয়েটা ভুল করে শুনে ফেলল

"মা গো মা চললাম আমি, করতে নিজের সংসার"

এই যে আবেগ, এই যে পুরনো দিনে ফিরে যাওয়ার কান্না কিংবা হঠাৎ রাতে মনে পড়ে যাওয়া সাবেক প্রেমিকার আদর এসব কি আপনারা কোন গানের মাঝে পেয়েছেন নাকি পুরনো সেলুলয়েড ফিতার আড়াল থেকে এসে হঠাৎ হাওয়ার মত এ মনের কোণে জমা করে দিয়েছে শীতের বসন্তকে।

আপনারা যারা অঞ্জন কে নিতান্তই ভালবাসেন বা অঞ্জন'র গান শুনে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দেন তারা কি কখনো ভেবেছেন জীবনমুখী সাইকেডেলিক মিউজিক কিভাবে তৈরি হয়?
ভার্সিটিতে উঠে হয়ত ছেলেটা দু চামচ পিংক ফ্লয়েড গিলে নিয়ে ---

"We Just two lost soul, swimming in a fish bowl year after year"

কিংবা হালকা গানস এন রোজেসের  সাথে নভেম্বর রেইনে  ভিজে স্বর্গদ্বারে টোকা মেরেছেন তারা কি ভেবেছেন বাংলাতেও বব ডিলান বা পিট সিগার স্বম্ভব। যারা নিতান্তই ব্লুজ মিউজিক এর নাম করে এরিক ক্ল্যাপ্টন বা বি বি কিং এর গান শুনে মহীরুহ পর্যায়ে চলে গেছেন তারা কিন্তু আদৌ জানে না বাংলা তেও এরিক ক্ল্যাপ্টন বা বি বি কিং সম্ভব।
এই যে বিকেল পেরোনো রোদ্দুরে হেঁটে হেঁটে আপনি যখন বেলা বোসের প্রেমে ধুঁকে ধুঁকে কিংবা সাবিনা বিনা প্রেমের আবেগ জানাতে না পেরে হঠাৎ ধরে বসলেন--

"আমি চাই না তোমার সাথে লড়তে"

বা

"মেয়েটার আছে যত্ন করে রাখা খাতার ভেতর চ্যাপ্টা গোলাপ ফুল"

অথচ সন্ধ্যে পেরিয়ে এসে যখন গভীর রাতের আবেগকে মাত্র কোলে তুলে নিতে যাওয়া আমাদের কৈশোর যখন বিস্মৃত জানালার পাশে এসে বসে তখন হয়ত তার মনে ভেসে উঠে--

"আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়"

আমাদের বয়েস পেরিয়ে যায়, শরীর জুড়ে নেমে আসে আহত মাছেদের মত ছটফটানি তখন আমরাও পুরনো দিনের কথা ভেবে বসতে পারি--

"সম্বন্ধ টা এইবার তুমি ভেস্তে দিতে পার "

আমাদের জীবন টা কে আমরা কখনো এক টুকরো অঞ্জন দিতে বিচার করে দেখেছি নাকি তাকে আমরা বিচার করতে চেয়েছি কোন রাজনৈতিক মতবাদ বা ধর্মীয় মতবাদ দিয়ে।
আমরা কি আবেগ দিয়ে নিজেদের স্বাধীনতাকে ভোগ করতে পেরেছি কখনো 
বিদেশি আগ্রাসন থামেনি বলে বুক চাপড়ে মেরেছি?

এক টুকরো অঞ্জন দিয়ে বিকেল কাটানো যায়, লেখক আজাদ কে দিয়ে হয়ত সন্ধ্যে কাটানো যায় বা লিঙ্গভেদে ভুগতে থাকা ঋতু কে নিয়ে হয়ত রাত কাটানো যায়। কিংবা বেলা বোসদের দলে তাকে ফিরে পাব বলে পুরোটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়।কিংবা স্করপিয়ন্সের "Still Loving you" কে দিয়ে এক রত্তি মুহূর্ত কাটিয়ে আসুন আরেক টুকরো অঞ্জন কে তেলে ভেজে মচমচে করে নিয়ে নিতান্তই বিকেল কাটিয়ে রাত পেরিয়ে দিই।

No comments