শোক | খন্দকার রিফাত



একটা হলুদ কাগজের প্যাকেট নিয়া আব্বু বাসায় ঢুকলেন। প্যাকেট তেলে ভিজে গেছে।
সন্ধ্যাবেলা আব্বু বাসায় আসেন না। আসার কথাও না। একটা প্লেট আনতে বললেন আমাকে। প্লেটে প্যাকেট থেকে পেঁয়াজু ঢাললেন। আমাকে ঢেকে বললেন "ধর পেঁয়াজু খা।" 

ঘটনা মেলাতে পারতেছিলাম না আমি। এত আবদার করতেছে কেন! দুইটা পেঁয়াজু খাইলাম আব্বুর সাথে।আব্বু চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছাদের দিকে তাকাই রইলেন কতক্ষণ। তারপর বললেন "আহ ইসমাইল! " আমি চিন্তা করে পাইলাম না কে ইসমাইল। ইসমাইল বইলা ছাদ দেখারও বা কি আছে? পরে আব্বা নিজেই বললেন ইসমাইল তার পুরাণ বন্ধু। 

আমারো মনে পড়লো ইসমাইল আংকেলের কথা। আব্বার সাথে তার আট-দশ বছর দেখা হয় নাই।আব্বা জীবন সামলাইতে সাঁতরাতে সাঁতরাতে কাহিল হইয়া পড়তেছেন আর তার সহব্যবসায়ী ইসমাইল আংকেল শহরের বড় ব্যবসায়ী। আব্বা তার পুরাতন বন্ধুদের এড়ায় চলেন। দশবছর দেখা করেন নাই।ইসমাইল আংকেলের মৃত্যুতে তবু কাতর হওয়ার কারণ বুঝলাম না।আব্বার মুখে এক দীর্ঘ ছায়া যেন,কষ্ট না বিষাদ নাকি মৃত্যু ভয়ের আচ্ছন্নতা বুঝা গেলোনা। 

শুধু বুঝা গেলো দীর্ঘ বিরহেও কখনো সখনো হৃদয়ের টান ম্লান হয় না। থেকে যায় একি ভাবে ভালবাসা। আব্বু আমার দিকে তাকাই বললেন " আমার স্পষ্ট মনে পড়ে ও সাইন করতে পারতোনা।আমি ওরে সাইন করা শিখাইলাম,ওর সাথে গাড়ি কিনলাম,কদিন আগেই বিয়া খাইলাম যেন! " বাবার দীর্ঘশ্বাস দেখে আমি বিভ্রান্ত হলাম আবার।তিনি কি অতীত নিয়ে স্মৃতিকাতর নাকি বন্ধুবিয়োগে আহত। আব্বা জানাজায় যাওয়ার জন্যে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন,যাওয়ার আগে বললেন ফিরতে রাত হবে। 

বাবার ঘর ছাড়ার কিছুক্ষণ পর মা চিল্লানো শুরু করলেন।তেল নাই। তরকারি রান্না হবেনা।আমার আসন্ন খাদ্যাভাব মাথা ভার করল।ভুলে গেলাম বাবার মুখের ছায়া। একজনের বেদনা পাশের জনকে ছুঁবেনা এটাই নিয়ম।সব বেদনাকে ছাপিয়ে যাবে ক্ষুধা এটাও জানা  ।

No comments