স্ক্রেচ | গাজী সাইফুল
সন্ধ্যের পরপরই স্টিভিলিনার সাথে দেখা। লাস্যময়ী রুশ নারী। একা একা বেরিয়েছে আজ খুব সম্ভবত। সাথে এনাসথেসিয়াকে দেখা যাচ্ছে না। হিমাদ্রি কিছুক্ষণ আগে ন্যানশান পার্কের সায়েন্স এরিয়ার একটি রেস্তোরাঁ থেকে নৈশভোজ শেষ করেছে। কিছুটা দৃষ্টি পরতেই থমথমে হাসি। সে একবার মাত্র কৌতূহল নিয়ে দেখল।
সন্ধ্যের পরপরই রকমসকম ভোজের চাইনিজ খারারের আল্লাদি গন্ধটা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। সায়েন্স এরিয়াটা বেশ পছন্দ তাঁর। লাস্ট সামার ভ্যাকেশনে রিয়া এসেছিল জেংজিয়ানে, এরপর দুজনে মিলেই রেস্তোরাঁগুলো আবিষ্কার করেছে। সে থাকে সিচুয়ান প্রভিন্সে, চাইলেই হরহামেশা দেখা হবার উপায় নেই। এরপরও কখনো কখনো হিমাদ্রি ওকে নিজের হ্যালুসিনেশনে নিয়ে এসেছে। কেন নিয়ে এসেছে, এটা একটা রহস্য। সে স্ক্রেচ করতে পারে, একবার ওকে বলা হল;
-কিছু গল্পের স্কেচ করে দেয়া যায়?
-ওসব হবে না একদমই; বুঝি না। অনেক অনুনয় বিননয়ের পরও সে রাজি হয়নি। অনেকটা একগুঁয়ে স্বভাবের। এরপরও ওর প্রতি একটা এটেনশন প্রচন্দ্রভাবে কাজ করে হিমাদ্রির। রিয়া মেয়েটি দেখতে অনেকটা টুকান পাখির মত। যার পালকের ভাঁজে রামধনু নাচে।
এরপর একদিন দু-জন শি জিং তু-তে গেল; সেখানে একটি লেকের পাশে দুজন অনেকক্ষণ হল মুখোমুখি বসে আছে। দুজনে কথাবার্তা বলছে, রিয়া কিছুটা মুডি মেয়ে। কথা খুব কম বলে। সে সময়টুকু পর্যন্ত দুজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব হয়েছিল প্রবল, এর বাহিরে কিছু চিন্তা করার বিষয়টি তখনও বোধ হয় সে অনুভব করেনি। মেয়েরা কিছু বিষয় খুব দ্রুত অনুধাবন করতে পারে, এ মেয়েটি ঠিক তেমন নয়। কিছু বিষয় হয়ত সে কিছুটা দীর্ঘ বিরতির পরই বুঝতে পারে। প্রেমের ব্যাপারটি প্রচন্দ্রভাবে অনুধাবন করছিল হিমাদ্রি। মার্কেসের বই আছে, নিউজ অব আ কিডন্যাপিং; অনেকটা ইচ্ছে হচ্ছিল রিয়াকে কিডন্যাপ করে সে কোথাও পালিয়ে যায়। এরপর নিউজের হেডিংসে থাকবে কিডন্যাপিং এর অন্তরালে অপ্রকাশিত একটি প্রেমের গল্প।
-হিমাদ্রি?
-হুম! খুব হাংরি; ওহ, সরি; আগেই আমাদের লাঞ্চ করে নেয়া উচিত ছিল। এখন চা-কফি কিছু খাবে?
-না, আমি খাই না ওসব।
-তবে কি লাঞ্চ করে নিবে? এখনও অবশ্য লাঞ্চ আওয়ার হয়নি।
-ও
-কটার সময় সচরাচর লাঞ্চ কর?
-সময়টা ওভাবে কাউন্ট করে লাঞ্চ করা হয় না, ইফ আই ফিল হাংরি। ইউনিভার্সিটিতে খাওয়াদাওয়া ক্যান্টিনেই করছি রিসেন্ট, সো একটু আরলি।
-হমম, বুঝলাম। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আরো কিছুটা সময় কি আমরা হাঁটতে পারি?
-হ্যাঁ, নিশ্চই। গো এহেড।
এরপর একটি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবাড়ের জন্য অপেক্ষা করছে, এর মধ্যে এক বয় এসে অর্ডার নিয়ে গিয়েছে। জাহাজের আদলে সাজানো গোছানো একটি রেস্তোরাঁ। ভেতরে বইয়ের বেশকিছু সারিসারি তাক, রিয়া উঠে গিয়ে মগ্ন হয়ে বই দেখতে থাকে। বাংলা সাহিত্যরের চেয়েও ইংরেজী সাহিত্যের প্রতি ওর আগ্রহতা একটু বেশি। এরপর দুটো বই হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল।
-হিমাদ্রি, রডি ডয়েলের বই পছন্দ কর? গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসকে?
-সময়ের কারণে !
-হুমম।
-প্যাডি ক্লার্ক, দ্যা ডেড রিপাব্লিক এ বইগুলো অবশ্য পড়েছি বেশ কয়েকবার।
-গুড, এখানের কালেকশনগুলো বেশ পুরনো, বাট ক্লাসিক্যাল। বেশ পছন্দ হয়েছে। হো হো করে কিছুটা হাসার চেষ্টা করল রিয়া। ওর মধ্যে একটা কিশোরী বসবাস করে, মাঝে মাঝে সে নিজেকে প্রকাশ করে। রিয়াকে তখন বেশ চঞ্চল মনে হয় হিমাদ্রির। যদিও রিয়া আগেও চেয়ে এখন বেশ বিপরীত। হয়ত মনে মনে খুব পছন্দ করে, এক ধরণের প্রবল ভালোবাসা কাজ করছে বলেই হয়ত এমন মনে হচ্ছে। মার্কেস সরলা এরেন্দিরায় দেখিয়েছেন, উলিসিস যখন প্রেমে পড়ে, সে হাত দেয়া মাত্রই সব কাচের জিনিস রঙ পাল্টে ফেলে। তখন তার মা বললেন, মেয়েটা কে? তুই নিশ্চই প্রেমে পড়েছিস। প্রেমে পড়লেই কেবল এই রকম ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেকটাই হয়ত...।
পুনশ্চ; আজ সকালে বের হবার আগে রিয়া চিননের একটা ফ্রক পড়েছে। হালকা লাল রঙের, সাথে কালো একটা কটি। সকালে গোছল করে ফ্রক পরার কারণে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। ডেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে। ওর চুল খুব ঘন, সহজে শুকাতে চায় না। তাই হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে, চুলগুলো গোছা করে তুলে ফুলের মত একটি পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো আটকায়। তারপর হালকা করে লাল রঙয়ের লিপস্টিক লাগালো, খুব মিষ্টি একটা পারফিউম স্প্রে করল। পারফিউমের গন্ধে তার শরীর ও মন দুটোই ভরে গেল। হিমাদ্রি কিছুটা উদায় হয়ে এ মুহূর্তে তাকিয়ে ছিল রিয়ার দিকে, এভাবে ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে হাসল সে,
-হিমাদ্রি ইউনিভার্সিটি কবে খুলবে একজেক্ট? কিছুটা বিব্রত বোধ করল সে, এ বিষয়ে সে জানে, এরপরও জানতে চাওয়াটা কিছুটা বোকামি হয়েছে।
-খুব সম্ভবত এ মাসেই; কেন? তোমার কি তাড়া আছে? তোমাদের ক্লাস এখনও অনেক দেরি, এসেছ সবে মাত্র। এ উইকটা থেকে যাও।
-ঠিক তা নয়। হুট করে চলে এসেছি, জানিয়ে আসিনি ইউনিভার্সিটিকে।
-ও আচ্ছা, ইটস নট ফ্যাক্ট। ডোন্ট ওরি। রিয়া?
-বলে ফেল; কি বলবে। কিছুটা মুখ ভেংচাল সে;
-একবার নিকেতনে এক চায়ের দোনানদারের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, সে তোমারও পরিচিত। ওই যে কথা বলার সময় দাঁতের ফাঁক দিয়ে পানের পিক তোমার ফ্রকে পরায় খুব মন খারাপ করেছিলে...
-হা, তো কি হয়েছে?
-গতরাতে একটা নিউজে দেখলাম একটা ট্রাক উল্টে!
হিমাদ্রির কথা শেষ হবার আগেই দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে এল সে বয়টি। বিশাল দুটো ট্রেতে !
সন্ধ্যের পরপরই রকমসকম ভোজের চাইনিজ খারারের আল্লাদি গন্ধটা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। সায়েন্স এরিয়াটা বেশ পছন্দ তাঁর। লাস্ট সামার ভ্যাকেশনে রিয়া এসেছিল জেংজিয়ানে, এরপর দুজনে মিলেই রেস্তোরাঁগুলো আবিষ্কার করেছে। সে থাকে সিচুয়ান প্রভিন্সে, চাইলেই হরহামেশা দেখা হবার উপায় নেই। এরপরও কখনো কখনো হিমাদ্রি ওকে নিজের হ্যালুসিনেশনে নিয়ে এসেছে। কেন নিয়ে এসেছে, এটা একটা রহস্য। সে স্ক্রেচ করতে পারে, একবার ওকে বলা হল;
-কিছু গল্পের স্কেচ করে দেয়া যায়?
-ওসব হবে না একদমই; বুঝি না। অনেক অনুনয় বিননয়ের পরও সে রাজি হয়নি। অনেকটা একগুঁয়ে স্বভাবের। এরপরও ওর প্রতি একটা এটেনশন প্রচন্দ্রভাবে কাজ করে হিমাদ্রির। রিয়া মেয়েটি দেখতে অনেকটা টুকান পাখির মত। যার পালকের ভাঁজে রামধনু নাচে।
এরপর একদিন দু-জন শি জিং তু-তে গেল; সেখানে একটি লেকের পাশে দুজন অনেকক্ষণ হল মুখোমুখি বসে আছে। দুজনে কথাবার্তা বলছে, রিয়া কিছুটা মুডি মেয়ে। কথা খুব কম বলে। সে সময়টুকু পর্যন্ত দুজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব হয়েছিল প্রবল, এর বাহিরে কিছু চিন্তা করার বিষয়টি তখনও বোধ হয় সে অনুভব করেনি। মেয়েরা কিছু বিষয় খুব দ্রুত অনুধাবন করতে পারে, এ মেয়েটি ঠিক তেমন নয়। কিছু বিষয় হয়ত সে কিছুটা দীর্ঘ বিরতির পরই বুঝতে পারে। প্রেমের ব্যাপারটি প্রচন্দ্রভাবে অনুধাবন করছিল হিমাদ্রি। মার্কেসের বই আছে, নিউজ অব আ কিডন্যাপিং; অনেকটা ইচ্ছে হচ্ছিল রিয়াকে কিডন্যাপ করে সে কোথাও পালিয়ে যায়। এরপর নিউজের হেডিংসে থাকবে কিডন্যাপিং এর অন্তরালে অপ্রকাশিত একটি প্রেমের গল্প।
-হিমাদ্রি?
-হুম! খুব হাংরি; ওহ, সরি; আগেই আমাদের লাঞ্চ করে নেয়া উচিত ছিল। এখন চা-কফি কিছু খাবে?
-না, আমি খাই না ওসব।
-তবে কি লাঞ্চ করে নিবে? এখনও অবশ্য লাঞ্চ আওয়ার হয়নি।
-ও
-কটার সময় সচরাচর লাঞ্চ কর?
-সময়টা ওভাবে কাউন্ট করে লাঞ্চ করা হয় না, ইফ আই ফিল হাংরি। ইউনিভার্সিটিতে খাওয়াদাওয়া ক্যান্টিনেই করছি রিসেন্ট, সো একটু আরলি।
-হমম, বুঝলাম। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আরো কিছুটা সময় কি আমরা হাঁটতে পারি?
-হ্যাঁ, নিশ্চই। গো এহেড।
এরপর একটি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবাড়ের জন্য অপেক্ষা করছে, এর মধ্যে এক বয় এসে অর্ডার নিয়ে গিয়েছে। জাহাজের আদলে সাজানো গোছানো একটি রেস্তোরাঁ। ভেতরে বইয়ের বেশকিছু সারিসারি তাক, রিয়া উঠে গিয়ে মগ্ন হয়ে বই দেখতে থাকে। বাংলা সাহিত্যরের চেয়েও ইংরেজী সাহিত্যের প্রতি ওর আগ্রহতা একটু বেশি। এরপর দুটো বই হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল।
-হিমাদ্রি, রডি ডয়েলের বই পছন্দ কর? গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসকে?
-সময়ের কারণে !
-হুমম।
-প্যাডি ক্লার্ক, দ্যা ডেড রিপাব্লিক এ বইগুলো অবশ্য পড়েছি বেশ কয়েকবার।
-গুড, এখানের কালেকশনগুলো বেশ পুরনো, বাট ক্লাসিক্যাল। বেশ পছন্দ হয়েছে। হো হো করে কিছুটা হাসার চেষ্টা করল রিয়া। ওর মধ্যে একটা কিশোরী বসবাস করে, মাঝে মাঝে সে নিজেকে প্রকাশ করে। রিয়াকে তখন বেশ চঞ্চল মনে হয় হিমাদ্রির। যদিও রিয়া আগেও চেয়ে এখন বেশ বিপরীত। হয়ত মনে মনে খুব পছন্দ করে, এক ধরণের প্রবল ভালোবাসা কাজ করছে বলেই হয়ত এমন মনে হচ্ছে। মার্কেস সরলা এরেন্দিরায় দেখিয়েছেন, উলিসিস যখন প্রেমে পড়ে, সে হাত দেয়া মাত্রই সব কাচের জিনিস রঙ পাল্টে ফেলে। তখন তার মা বললেন, মেয়েটা কে? তুই নিশ্চই প্রেমে পড়েছিস। প্রেমে পড়লেই কেবল এই রকম ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেকটাই হয়ত...।
পুনশ্চ; আজ সকালে বের হবার আগে রিয়া চিননের একটা ফ্রক পড়েছে। হালকা লাল রঙের, সাথে কালো একটা কটি। সকালে গোছল করে ফ্রক পরার কারণে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। ডেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে। ওর চুল খুব ঘন, সহজে শুকাতে চায় না। তাই হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে, চুলগুলো গোছা করে তুলে ফুলের মত একটি পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো আটকায়। তারপর হালকা করে লাল রঙয়ের লিপস্টিক লাগালো, খুব মিষ্টি একটা পারফিউম স্প্রে করল। পারফিউমের গন্ধে তার শরীর ও মন দুটোই ভরে গেল। হিমাদ্রি কিছুটা উদায় হয়ে এ মুহূর্তে তাকিয়ে ছিল রিয়ার দিকে, এভাবে ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে হাসল সে,
-হিমাদ্রি ইউনিভার্সিটি কবে খুলবে একজেক্ট? কিছুটা বিব্রত বোধ করল সে, এ বিষয়ে সে জানে, এরপরও জানতে চাওয়াটা কিছুটা বোকামি হয়েছে।
-খুব সম্ভবত এ মাসেই; কেন? তোমার কি তাড়া আছে? তোমাদের ক্লাস এখনও অনেক দেরি, এসেছ সবে মাত্র। এ উইকটা থেকে যাও।
-ঠিক তা নয়। হুট করে চলে এসেছি, জানিয়ে আসিনি ইউনিভার্সিটিকে।
-ও আচ্ছা, ইটস নট ফ্যাক্ট। ডোন্ট ওরি। রিয়া?
-বলে ফেল; কি বলবে। কিছুটা মুখ ভেংচাল সে;
-একবার নিকেতনে এক চায়ের দোনানদারের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, সে তোমারও পরিচিত। ওই যে কথা বলার সময় দাঁতের ফাঁক দিয়ে পানের পিক তোমার ফ্রকে পরায় খুব মন খারাপ করেছিলে...
-হা, তো কি হয়েছে?
-গতরাতে একটা নিউজে দেখলাম একটা ট্রাক উল্টে!
হিমাদ্রির কথা শেষ হবার আগেই দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে এল সে বয়টি। বিশাল দুটো ট্রেতে !
অসাধারণ
ReplyDelete