সেই ছেলেটি | ফাহিমা খানম




কোচিং জিনিসটা আসলেই বিরক্তিকর। রমজান মাসেও ছাড় নাই। সারাদিন রোজা রেখে আবার এই দৌঁড়াদৌঁড়ি,পরীক্ষা- আর ভালো লাগে না। ঘুমটাও ঠিকমতো হয় না। উফফ! এতো পড়ে হবেটা কী? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কোচিং এর সিঁড়ি বেয়ে নামছিল আছিয়া৷ আজকের পরীক্ষাটা ভালো হয়নি তেমন। এই প্রদীপ স্যারটা ডিউটি দিলেই পরীক্ষা খারাপ হয়। পরীক্ষার হলে গার্ড দেয়া হয় যাতে স্টুডেন্টরা কথা না বলে সেটা দেখার জন্য, কিন্তু সেই গার্ড যদি নিজেই পরীক্ষার হলে কথা বলেন তখন স্টুডেন্টরা কী করবে?

এরকম সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সরু গলিটা ধরে হেঁটে চলেছে সে। বান্ধবীরা সব সকালের ব্যাচে পরীক্ষা দিচ্ছে। ঐ ব্যাচে আর জায়গা নেই বলে অগত্যা বিকেলের ব্যাচে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে৷ গলির মুখে এসে দাঁড়িয়ে চারপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিল আছিয়া। লকডাউন শেষ হয়েছে এই কদিন আগে। কিন্তু মনেই হচ্ছে না, এতোদিন সবাই  ঘরবন্দী ছিল। মৃত্যুর আশংকায় দিনানিপাত করছিল। সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি সে!

আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলো এক ঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে। "আমিও যদি পাখি হয়ে উড়ে বেড়াতে পারতাম! নির্দ্বিধায় যেখানে খুশি সেখানেই উড়ে বেড়াতে পারতাম!" পাখিগুলোর তাকিয়ে আনমনে কথাগুলো বললো আছিয়া।

"কীরে আছু, কী বলিস বিড়বিড় করে?"

আচমকা প্রশ্নটা শুনে চোখ নামিয়ে সামনে তাকালো আছিয়া। এতোক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ চোখ নামিয়ে আনায় কেমন যেন ঝাপসা দেখছে চারিপাশ। চোখ সয়ে আসতেই ভালো করে দেখতে পারলো মুখটা। তরী। আছিয়ার বন্ধু। একই স্কুলে পড়ে,তবে শিফট আলাদা।

"কী রে? কথা বলিস না কেন? পড়তে পড়তে কথা বলা ভুলে গেলি নাকি?" আছিয়ার কোনো জবাব না পেয়ে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল তরী।  কেউ প্রশ্ন শুনে উত্তর দিতে দেরি করলে বড্ড বিরক্ত লাগে  ওর।

"আরেহ ধুর", হেসেই উত্তর দিলো আছিয়া," চোখে ঝাপসা দেখছিলাম তাই এতোক্ষণ তোকে চিনতে পারি নাই। "

"হুম! এখন তো চিনবিই না। ব্রিলিয়ান্ট মানুষজন কি আর আমার মতো নরমাল পাবলিককে চিনবে?" অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো তরী।

"হুম। তোর ললাট", কথাটা বলে দুজনেই একসাথে হেসে ফেললো। তরী মেয়েটার স্বভাবই এমন সবসময় মজা করে।

" এদিকে কই যাস?" হাসি থামিয়ে এবার প্রশ্নটা করলো আছিয়া।

"এইতো স্যারের বাসায়। তুই এই বিকেলে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে কার অপেক্ষা করিস রে? বাসায় জানে?" তরী টিপ্পনী কাটলো।

"বলা যাবে না এসব। সিক্রেট ব্যাপার স্যাপার " আছিয়াও এবার মজা নিচ্ছে।

"আন্টিকে বলতে হবে মেয়ের হাবভাব ভালো না। একটা গতি করে দিতে হবে"

"হুম। বলিস। কৃতজ্ঞ থাকবো তোর প্রতি। "

"হাহা! আচ্ছা বল না, দাঁড়িয়ে আছিস কেন?"

"বাসায় যাবো। কোচিং'র পরীক্ষা দিয়ে আসলাম।"

"পরীক্ষা কেমন হলো?  অবশ্য তোর পরীক্ষা তো ভালোই হবে। "

"বৎস, প্রদীপ স্যার ডিউটিতে ছিলেন। আর কিছু বলা লাগবে?"

"না না! ধন্যবাদ। বুঝে গেছি। অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছিস। "হাসিচাপা কণ্ঠে তরী উত্তর দিলো। 

এককালে তরীও আছিয়ার সাথে এই কোচিংটায় পড়তো। প্রদীপ স্যারের স্বভাব ওরও জানা আছে। আরও কিছুক্ষণ গল্প করে বিদায় নিলো সে। স্যারের বাসায় দেরি হয়ে যাচ্ছে।

একটা রিকশা ডাকা দরকার। বৃষ্টিতে ভিজতে আছিয়ার দারুণ লাগে। আজও ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু বাসায় যদি খবর পায়, সে বৃষ্টিতে ভিজেছে- একেবারে কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে! দরকার নেই বাবা এখন কাউকে চটানোর। এমনিতেই করোনার আতংক শেষ হয়েছে বেশীদিন হয় নি। এর মধ্যেই ঠান্ডা কাশি বাধানোর কোনো ইচ্ছে নেই আছিয়ার।

রাস্তার ওপাশে রিকশা থামিয়ে অলস ভঙ্গিতে সিগারেট টানছিল রিকশাওয়ালা চাচা। সিগারেটের ধোঁয়া একদমই সহ্য করতে পারে না ও। একবার বাসায় এক আত্মীয়ের সাথে এ নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা হয়েছিল ওর। সবসময় চেষ্টা করে ধূমপায়ীদের এড়িয়ে চলতে। আজও তাই করতো। কিন্তু আশেপাশে আর কোনো রিকশা নেই দেখে বাধ্য হয়ে এই রিকশাকেই ডাকতে হলো, "চাচা,যাবেন?"

ডাক শুনে এক হাতে সিগারেটটা ধরে রিকশা ঘুড়িয়ে রাস্তার এ পাশে এলেন তিনি। বয়স আনুমানিক ৫১/৫২ হবে। গায়ে পহেলা বৈশাখের একটা ফতুয়া। একসময় ফতুয়ার রঙ সাদা ছিল, তিলা পড়ে এখন সে রং ধূসর হয়ে গেছে। 

"কই যাইবেন?" ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন তিনি। আছিয়ার এই জিনিসটাই সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগে। মুখের সামনে এরকম ধোঁয়া ছাড়াটা। একদমই সহ্য করতে পারে না।

কাশতে কাশতে অনেকটা আদেশের সুরেই বললো সে,"সিগারেট ফালান আগে।"

অন্য সময় হলে নিশ্চয়ই  তিনি এ নিয়ে আপত্তি জানাতো।  কিন্তু এখন কেন যেন ঠিক আপত্তি জানাতে পারলো না। বিব্রতকর একটা হাসি দিয়ে সিগারেটটা হাত থেকে নিচে ফেলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ কী মনে করে যেন আর ফেললেন না নিচে। রিকশা থেকে নেমে পেছনে রাখা সিটি করপোরেশনের নীল রঙের বড় ডাস্টবিনটার দিকে এগিয়ে গেলেন। লাল রঙের ঢাকনাটা খুলে ফেলে দিলেন তার মধ্যে। আবার ঢাকনাটা লাগিয়ে পাশের দোকানির কাছে একটু পানি চেয়ে হাতটা ধুয়ে গায়ের ফতুয়ার নিচের অংশ দিয়ে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এলেন। একরাশ বিস্ময় নিয়ে পশ্চার্ধ এই চাচার দিকে তাকিয়ে রইলো আছিয়া। আমরা তথাকথিত শিক্ষিতরাও রাস্তায় যেখানে সেখানে ময়লা ফেলি।

ডাস্টবিনে ময়লা ফেলি না কিন্তু ডাস্টবিনের গা ঘেঁষে ঠিক পাশেই ময়লা ফেলি। অথচ এই লোকটা সামান্য এক টুকরো সিগারেটও ঠিকই সেই নির্ধারিত স্থানে ফেলে আসলেন! ভালো মন্দ বিচারের ক্ষমতা আমাদের থেকে ওনাদের ঢের বেশী। কিন্তু সিগারেট খাওয়া যে খারাপ,এটা কি তিনি বুঝতে পারেন না?  ভাবনার অতলে হারিয়ে যাচ্ছিল আছিয়া। কেমন যেন একটা ঘোরের মাঝে আছে সে। সহসাই চাচার কণ্ঠ শুনে ঘোর কেটে গেল তার।

"কই যাইবেন?" আবারও প্রশ্নটা করলেন তিনি।

"বন্দর "

"উডেন"

"ভাড়া কত?"

"রমজান মাস। দিয়েন বুঝ কইর‍্যা।"

ভাড়া দিয়ে দর কষাকষি ভালো লাগে না ওর। কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লো। হুড টেনে তুলতে তুলতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। হাওয়ার ঝাপটা এসে মুখে লাগছে, সেই সাথে বৃষ্টি ফোঁটাও। চাচা তাড়াতাড়ি ভাঁজ করা পলিথিনটা খুলে মেলে দিলো ওর পায়ের উপর। এগিয়ে চললো রিকশা। বৃষ্টির তেজ বাড়ছে। দেখতে দেখতে চড়চড় করে বেড়ে চলেছে বৃষ্টি। রাস্তা একদম ফাঁকা। পথচারী যারা ছিলেন সবাই গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশেত দোকানগুলোর নিচে।

বড্ড কফি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। না না!  ডালগোনার দরকার নেই,চিনি একটু বেশী দিয়ে গাঢ়-ঘন করে বানানো কফি। আর সাথে একটা উপন্যাসের বই! বারান্দার দোলনায় বসে বৃষ্টির দিনে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দিয়ে উপন্যাস পড়াটা আছিয়ার অনেক দিনের অভ্যাস। রমজান মাস ছাড়া এর নড়চড় হয় না।

হঠাৎ এম্বুলেন্সের শব্দে নড়েচড়ে বসলো সে। এই এম্বুলেন্সের শব্দটা শুনলেই ওর মন খারাপ হয়ে যায়! শব্দটা ওর কাছে আর্তনাদের মতো বলে মনে হয়। হ্যাঁ, আর্তনাদই তো। বাঁচার আর্তনাদ!
২০১৮ এর ছাত্র আন্দোলনের সময় ও দেখেছিল, ঢাকায় ছাত্ররা এম্বুলেন্স চলাচলের জন্য আলাদা একটা লেন রেখেছিল। দৃশ্যটা দেখে ও ওর মাকে বলেছিল, "ইশশ! সবসময় যদি আলাদা লেন রাখা হতো, তাহলে আর রোগীদেরকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না!" এম্বুলেন্সের শব্দ শুনে হঠাৎ মনে পড়লো সেই আন্দোলনের কথা। মাঝে মাঝে ওরও মনে হয়, দেশটা চালানোর দায়িত্ব যদি স্টুডেন্টদের দেয়া হতো- তাহলে হয়তো নিমিষেই  অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত!

এম্বুলেন্স দেখলেই ও চেষ্টা করে দেখার ভেতরে কেউ আছে কিনা। কোনো রোগীকে দেখলেই চোখ সরিয়ে নেয়, বেশীক্ষণ দেখতে পারে না। কেউ বলে দেয়নি, তবে ওর চাহনি দেখেই স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছিল ও দুচোখ দিয়ে এম্বুলেন্স খুঁজছে। শব্দ শুনে চাচা রিকশাটা রাস্তার একদম পাশ থেকে নিয়ে চলেছেন। কিন্তু, এম্বুলেন্স কোথায়? রিকশার পাশ থেকে শব্দ করে ছুঁটে গেল একটা মোটরসাইকেল।
চালক এবং আরোহী দুজনেই হিন্দি সিনেমার নায়কের স্টাইলে চিৎকার করতে করতে যাচ্ছে আর মাঝেমাঝে বিকট শব্দে সেই হর্ন বাজাচ্ছে।

"মাইনষে পারেও। আগে যাওনের লাইগ্যা হুন্ডায় এম্বুলেন্সের ছাউন্ড দেয়ার মানে আছে কুনু?" 

অনেকটা বিরক্তির সাথেই মাথা নেড়ে চাচা কথাটা বললেন। আছিয়াও মনে মনে ভাবলো,আসলেই তো সাইডের দরকার হলে বাইকের হর্ন বাজালেই তো হয়। তারজন্য এম্বুলেন্সের শব্দ ব্যবহারের কী দরকার? মানুষ এতো অদ্ভুত কেন?

বৃষ্টির ফোঁটা তীরের মতো এসে শরীরে বিঁধছে। সামনটা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে! অনেকক্ষণ ধরে চুপ থাকাটা আছিয়ার স্বভাবে নেই। কিছু একটা বলা দরকার, "চাচা, আপনার বাড়ি কই?"
বৃষ্টির শব্দে আছিয়ার কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে গেছে।

"চাচা, রেইনকোট নাই? একদম তো ভিজে গেলেন!"

"এট্টু বৃষ্টিতে হবে না কিছু",এতোক্ষণে আছিয়ার প্রশ্ন শুনতে পেয়ে পেছনে তাকিয়ে সহাস্য মুখে উত্তর দিলেন তিনি।

"হবে না মানে? জ্বর উঠবে তো!"

"ও এট্টু আট্টু হইলে পরে সাইরে যাবেনে "

আর কি বলা উচিত ভেবে না পেয়ে চুপ হয়ে গেল আছিয়া। বড়দের সাথে কথা  বলার এই এক ঝামেলা-  কথা খুঁজে পাওয়া যায় না!

বৃষ্টির তেজ  কমতে শুরু করেছে।মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। ছাতা মাথায় দিয়ে রাস্তায় লোকজন নামতে শুরু করেছে। রিকশা- গাড়ি তেমন একটা নেই।

রাস্তা যেন আজ শেষই হচ্ছে না। আঁকাবাঁকা গলিপথ পেরিয়ে রিকশা এসে পড়লো বড় রাস্তাটায়। যেকোনো আবহাওয়ায়, যেকোনো সময়ে - দিন হোক কিংবা রাত, এই রাস্তাটা সবসময়ই লোকে লোকারণ্য। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইফতার হতে এখনো

ঘন্টা দুই বাকি। রাস্তার দুপাশে দোকানিরা ইফতার সামগ্রী সাজিয়ে  বসেছে। বিশাল কড়াইয়ে ডুবন্ত  তেলে পেঁয়াজি, বেগুনি, জিলিপি ভাজা হচ্ছে। ফলমূল আর খেঁজুরের স্তূপের উপর ভনভন করে মাছি ঘুরছে,কিন্তু উপরে পলিথিনের আবরণ থাকায় সুবিধে করতে পারছে না ঠিক। দোকানি ক্রেতার সাথে কথা বলছেন আর ফাঁকে ফাঁকে হাত নেড়ে মাছি তাড়াচ্ছেন!

রিকশা এবার এগিয়ে চলেছে নগরীর বড় বড় রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে। রমজান উপলক্ষে হরেক রকমের আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে সেগুলো, দিনের বেলা তো দেখা যায় না তবে রাতে এলে দেখা যায় রকমারি  আলোর ছটা। পেঁয়াজি, জিলিপি,বেগুনি, বুটের ডাল তো আছেই। এখানে আরেকটু হাই লেভেলের ইফতারি সাজানো হয়েছে- কয়েক রকমের বাখর খানি, কাবাব, স্টিকস, চিকেন ড্রামস্টিকস, চিকেন গ্রিল , ফিশ ফিংগারস, নাগেটস, কয়েক প্রকার মিষ্টান্ন আরও কত কী! সবই আছিয়ার প্রিয় খাবার। এগুলো পেলে সারাদিনে আর কিছু না হলেও হয়। কিন্তু বছরের এই সময়টাতে কেন যেন এসব খাবার দেখলে ওর কেমন যেন বিরক্ত লাগে।চারিপাশ দেখতে দেখতে খেয়ালই করেনি রিকশা কখন এসে জ্যামে আটকেছে। সিলেটের জ্যাম অবশ্য ঢাকার মতো ভয়ানক না। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ছেড়ে দেয়। কিন্তু আজকের জ্যামটা মিনিট পাঁচেকে ছাড়লো না। রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে তাই এমন বিপত্তি। কাজটা অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত, কিন্তু হঠাৎ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় আর শেষ হয় নি। যেকোনো ভাবেই হোক,ঈদের আগে কাজটা শেষ করতে হবে। তাই এতো তাড়াহুড়ো করে বিনা নোটিশেই রাস্তা ব্লক করে কাজ চলছে, কিঞ্চিৎ জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে চলাচলের জন্য। কিন্তু যানবাহনের সংখ্যা তার তুলনায় ঢের বেশী - অল্প কথায় এটাই জ্যামের কারণ। কখন যে এই জ্যাম ছাড়বে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। ঘড়ির দিকে তাকালো সে। রোদে চিকচিক করছে মেটালের প্রলেপ। ইফতার হতে এখনও বাকি আছে ঘন্টা দেড়েক। কী করা যায়!

আজকাল হুটহাট ভাবনার জগতে হারিয়ে যেতে ওর বেশ লাগে। "কী নিয়ে ভাবা যায়"- ভাবতে ভাবতে চোখে পড়লো ছেলেটাকে। অনেকক্ষণ ধরেই রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবার মতো বিষয় পেয়ে গেছে বলে আগ্রহভরে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। বয়েস বোধ করি ১০/১১ হবে। হাতে রং বেরঙের বেলুন। বেলুনগুলো দেখে মনটা কেন যেন একটু খচখচ করে উঠলো। "বেলুন তো বাচ্চাদের  হাতেই থাকবে, ওরা সেগুলো নিয়ে খেলাধুলো করবে-এতে মন খচখচ করার কী আছে?"

ছেলেটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তার হাতের বেলুনগুলো তার খেলার জন্য না, এগুলো তার জীবিকা নির্বাহের জন্য, বিক্রি করে আয় রোজকারের জন্যে। গায়ে মুঠোফোন কোম্পানির একটা  টি-শার্ট।  ছেলেটার চেয়ে টি-শার্টটা সাইজে বড়। জায়গায় জায়গায় ফুটো হয়ে আছে।'হরিণের মতো চোখ','মুক্তোঝরানো হাসি' সৌন্দর্যতা বোঝাতে ব্যবহৃত এসব উপমা আছিয়ার কাছে কেন যেন ঠিক ভালো লাগে না। কিন্তু এই ছেলেটার বেলায় এই উপমাগুলো খুব খাটে। মাথার উষ্কখুষ্ক  চুলগুলো মায়াবী চেহারাটার সাথে মানিয়েছে বেশ। 

ছেলেটা এখনো সেই রেস্টুরেন্টের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। নগরের নামীদামী রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে একটি। অপলক দৃষ্টিতে কী যে দেখছে দেখার জন্য আছিয়াও তার দৃষ্টিকে অনুসরণ করলো। এতোক্ষণে বুঝলো, কী দেখছে সে।বুঝতে পেরেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। ঠিক এই কারণেই  বাইরে এতো  এতো মুখোরচক খাবার দাবার সাজিয়ে বসাটাকে পছন্দ করে না সে। আসা যাওয়ার পথে এরকম কত মানুষ যে এসব দেখে,বাজেটের বাইরে বলে কিনতে পারে না, তাই মনকে বুঝ দেয়,"এসব খাবার খাওয়া ঠিক না! "

খাবারে মশা তাড়ানোর মতো করেই ছেলেটাকেও দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছেন সেই বিক্রেতা। একটু দূরে সরে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সে, তাকিয়ে আছে। লোকজন তাকে ঠেলে সামনে এগিয়ে আসছে, কেউ কেউ আবার অকথ্য ভাষায় গালিও দিচ্ছে। ভাষা সত্যিই বড় অদ্ভুত।  কখনও তাকে ব্যবহার করে কারো মন নিমিষেই ভালো করে দেয়া যায়, কখনও আবার নিমিষেই মন খারাপ করিয়ে দেয়া যায়। মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গেল ছেলেটা। "এই যাহ! হারিয়ে ফেললাম!" বিড়বিড় করে বলে চারিদিকে দ্বিগবিদিক হয়ে তাকে খুঁজতে লাগলো আছিয়া।

মিনিট  খানেক পরে আবার খুঁজে পেল। লাইব্রেরির সিঁড়িতে চুপটি করে বসে আছে সে। মনটা বেশ খারাপ। হাতের বেলুনগুলো রেলিঙের সাথে বেঁধে রেখেছে। আপনমনে কী যেন ভাবছে।
ছেলেটা যে সিঁড়িতে বসে আছে, ওখানটায় আরেকটা ছোট্ট ছেলে তার এক ছোট্ট বোনকে কোলে নিয়ে রোজ বসে থাকে। ভীষণ খারাপ লাগে ওদের জন্য। খারাপ লাগে। কিছু করতে পারে না বলে ও ধারের সিঁড়ি দিয়ে উঠতেও বিব্রতবোধ হয় তার । আজকেও ওরা আছে কি না কে জানে। রিকশা থেকে অতোদূর পর্যন্ত দেখা যায় না। স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রায়ই দেখে ওরা লোকজনকে বেলুন কেনার জন্য কীভাবে জেকে ধরে। অনেকে কিনে, তবে বেশীরভাগই না কিনে এভোয়েড করার চেষ্টা করে। অনেকে আবার দুর্ব্যবহারও করে- ওর ভীষণ রাগ হয় তখন। তবে ওরাও আবার নাছোড়বান্দা,  মাঝে  মাঝে একটু বাড়াবাড়িই করে।

ছেলেটাকে এখন আর দেখতে পাচ্ছে না সে। একজন লোক আড়াল করে দাঁড়িয়েছেন।
"উফফ, লোকটা সরে না কেন" বিরক্ত হয়ে ভাবছে সে। তার মনের কথাটা পড়তে পেরেই হয়তো লোকটা সরে দাঁড়ালেন। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলেন। এবং সেই সময়েই অপ্রিয় কাজটি করলেন।
বেশ কয়েকটা বেলুন ফাটিয়ে দিলেন। আছিয়া দেখে বেশ চমকে উঠেছিল। প্রথমটায় ভেবেছিল হয়তো ভুল করে এমনটা করেছেন, দাম দিয়ে দেবেন। কিন্তু এটা যে ভুল করে নয় ইচ্ছে করেই এমনটা করেছেন- খানিক পরেই তা বুঝতে পারলো। ছেলেটা কেমন যেন এক ঘোরের মাঝে ছিল, তাই ঘটনাটা দেখেও দেখেনি কিংবা খেয়াল করে নি। খেয়াল করলো যখন ফেটে যাওয়া বেলুনের সুতো আর সুতোর সাথে আটকানো বেলুনের অবশিষ্ট  অংশ এসে তার ঘাড়ে পড়লো। হন্যে হয়ে ছেলেটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো দামের জন্যে, কে জানে- অভিযোগ জানানোর  জন্যও হতে পারে। রিকশা থেকে দোতলার যতটুকু দেখা যায় তার মাঝে লোকটা নেই।

"নাহ, এই জ্যাম আজকে আর ছুটবে না" ভেবে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে লাইব্রেরির সামনে এসে দাঁড়ালো সে। ছেলেটা নিচে নেমে এসেছে। রেলিং এর সাথে বেঁধে রাখা বেলুনগুলো খুলছে ।  বেলুনের সংখ্যা যে আরও দুটো কম, তা সে বুঝতে পেরেছে কি না বোঝা গেল না।

আছিয়ার ব্যাগে কিছু জমানো টাকা আছে,বই কিনবে বলে জমিয়েছিল। মিনিট খানেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো টাকাগুলো ছেলেটাকে দিয়ে দেবে কিংবা যা খেতে চায় কিনে দেবে।

"এই যে,ভাইয়া শোনো" চারিদিকের কোলাহলে সে ডাক ছেলেটার কানে গেল না। আবারও ডাকলো সে। এবার মুখ তুলে তাকালো ছেলেটা। এই প্রথম এতো কাছ থেকে ছেলেটাকে দেখছে।  চোখের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো, পুরো একটা উপন্যাস লেখা যাবে শুধু ঐ দুটো চোখের ভাষা নিয়ে।
"ভাইয়া,তোমার নাম কী?"

"সাকিব"

বছর তিনেক আগে আছিয়াদের স্কুলে কোথা থেকে যেন সাকিব নামের একটা ছেলে এসেছিল ওরই বয়সী। ভর্তি হতে না, ওদের স্কুলটা গার্লস স্কুল। সাহায্যের জন্য এসেছিল। পুরো স্কুল জুড়েই ছেলেটাকে নিয়ে অনেক হইচই হয়েছিল।সব ক্লাসের মেয়েরাই ওকে এটা ওটা দিতো, কেউ কেউ আবার নিজের টিফিনটাও দিয়ে দিতো। অর্চিতা সবাইকে নিয়ে প্ল্যান করেছিল সাকিবকে ওর মায়ের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। আর খরচ যা আসবে তা ওরা বন্ধুরা মিলেই চালিয়ে নেবে। কিন্তু তার পরপরই ছেলেটা হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে গেল। প্রতিদিনইস্কুলে এসে ওকে খোঁজে সবাই, ছুটির পরে গেইটে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে- কিন্তু আর দেখা পায় নি!

"এইগুলো রাখো ভাইয়া" টাকাগুলো বাড়িয়ে দিলো সে।

অবাক হয়ে আছিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে সাকিব প্রশ্ন করলো,"টাকা? কেন?"

"কিছু কিনে খেও"

"আপনের টাকা আমারে দিতেছেন কেনো?"

"কেন সেটা জানা লাগবে না। নাও ধরো। আজান দিয়ে দিবে একটু পরেই। আমার বাসায় যেতে হবে। কী হলো? নাও, ধরো" মুচকি হেসে আছিয়া উত্তর দিলো।

"আপনি কি বেলুন কিনবেন?"

"না ভাইয়া, আমি তো বেলুন দিয়ে এখন আর খেলি না। আর আমার ছোট ভাইবোনও নেই। বেলুন কিনে কী করবো, বলো?"

"তাইলে টাকা দিতেছেন যে?"

"এমনিতেই। বেলুনগুলো তুমি অন্য কারো কাছে বিক্রি করো।"

"তাইলে ত আমি এই টাকা নিতে পারুম না। এইটা ঠিক না"

"আহারে,এখনই ঠিক বেঠিক শিখে গেছে। আমিও দেখেছি কারা বেঠিক কাজ করেছে" বলতে বলতেই তার মুখটা শক্ত হয়ে গেল।

"আম্মা বলছে, যে যেমুন অন্যায় করবে, আল্লাহ তারে তেমুন শাস্তি দিবে"

"বাহ,তোমার আম্মা তো ঠিক কথা বলেছেন। কী করেন তিনি?"

"আম্মা মইরা গেছে" মাথা নিচু করে জবাব দিল সাকিব।

নিজের উপরেই এখন রাগ হচ্ছে আছিয়ার, কী দরকার ছিল প্রশ্নটা করার?

"ওহ সরি ভাইয়া, তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। আমি তো জানতাম না! জানলে প্রশ্নটা করতাম না"
আছিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সাকিব। কিছু বলছে না।

" নাও এটা রাখো। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য উপহার!  কিছু কিনে খেও। "

সাকিবকে কেউ কখনও উপহার দেয় নি। উপহারের কথা শনে তাই তার চোখে জল চলে এলো।
"উমম, আচ্ছা চলো আমিই কিনে দিচ্ছি।" খাবারের সামনে গেলে যে দোকানি আবারও তাকে মশা মাছি তাড়ানোর মতো করে তাড়িয়ে দেবে- সে মনে পড়তেই কথা বললো সে৷

ইফাতার হতে আর বেশী দেরি নেই। খাবারের দোকানগুলোতে লোকের ভিড়ও বাড়ছে। অনেক কষ্টে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। সাথে সাকিব।ইফতারি বিক্রেতা আবারও একটা গাল দিয়ে তাড়িয়ে দিতে যাচ্ছিল তাকে,

"আংকেল, রোজার দিনে অন্তত মানুষকে গালাগাল করবেন না। ও আমার সাথে এসেছে। যদি সমস্যা থাকে আমাকে বলুন আমরা অন্য জায়গায় যাচ্ছি " মুখ শক্ত করে আছিয়া বললো। কথাগুলো শুনে তিনি ভীষণভাবে চমকে গেলেন। এই ছেলেটার জন্য কেউ তাকে এভাবে বলতে পারে- ভাবেননি। সাকিবের ইচ্ছেমতো অনেকগুলোআইটেম কেনা হলো। কিনতে আসা অনেকেই বেশ অবাক হয়ে আছিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ওর সেদিকে তাকানোর সময় নেই। কিনেই ভীড় ঠেলে আবার বেরিয়ে আসলো ওরা।

সাকিবের মনে অনেক আনন্দ হচ্ছে! এতোদিন যে খাবারগুলোর দিকে কেবল তাকিয়ে থাকতো,টাকা নেই বলে কিনতে পারতো না, আজ সেই খাবারগুলোই কেনা হয়েছে- তার জন্যই! খুশির সাথে সাথে আবার লজ্জাও লাগছে,এতোগুলো টাকা খরচ করালো। "নাও ভাইয়া, বাসায় গিয়ে সবাইকে নিয়ে খেও।" "আমার তো বাসা নাই, আপু" আনন্দটা কেন যেন উবে গেছে।

আছিয়া মা বাবার একমাত্র মেয়ে। হঠাৎ আপু ডাকটা শুনে কেন যেন অন্যরকম একটা অনূভুতি হলো। যেন ওর আপন কেউ ডেকেছে।  পাছে আবারও কষ্ট দিয়ে ফেলে তাই একটা প্রশ্ন করতে গিয়েও করলো না। হঠাৎ সাকিবের বয়সী আরেকটা ছেলে সাকিবের নাম ধরে ডেকে সামনে এসে দাঁড়ালো।ছেলেটাকেই দেখেই সাকিব আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। পরিচয় করিয়ে দিল ওরা একসাথে এক জায়গাতেই থাকে, ওর বন্ধু,নাম রাকিব। আছিয়ার অন্যতম প্রিয় লেখক রকিব হাসানের সাথে নামটার মিল আছে। দুজন মিলে আছিয়ার সাথে গল্পজুড়ে দিল, আছিয়াও হাসিমুখে ওদের কথা শুনলো। 

হঠাৎ বাসায় যাওয়ার কথা  মনে পড়লো। আব্বু সিলেটের বাইরে আছেন, আম্মু বাসায় একা। যেতে দেরি হচ্ছে বলে নিশ্চয়ই অনেক চিন্তায় আছে। বিদায় নেয়ার কথা বলতেই সাকিব আর রাকিবের মুখ দুটো অন্ধকার হয়ে গেল। আছিয়ারওযেতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু যেতে তো হবেই।
এখনও জ্যাম ছাড়েনি। বাসা বেশী দূরে না, হেঁটেই যাওয়া যাবে। আজান দেয়ারও সময় হয়ে গেছে। লাইব্রেরি   থেকে বেরিয়ে এলো সে। হঠাৎ কী যেন ভেবে আবার ফিরে গেল ওদের কাছে। ওরা তো দেখেই আনন্দে ছুটে এলো,

"ভাইয়া, তোমরা আছো তো এখানে? কতক্ষণ থাকবা এখানে?"

"কেন?" অবাক হয়ে উত্তর দিলো দুজনেই। 

"ইফতারের পরে একটু থাকতে পারবে? আমি আবার আসবো" শুনে একই সাথে খুশি ও অবাক হলো ওরা,"হ্যাঁ, থাকবো আপু।"

ইফতার শেষে আছিয়া আলমারি খুলে বসলো। অনেকগুলো টি শার্ট বের করলো অনেকগুলো সংগঠনের সাথে যুক্ত সে। প্রায়ই বিভিন্ন ওয়ার্কশপে, সেমিনারে ডাক পড়ে। এগুলো সেখান থেকেই পাওয়া। ফটোসেশানের পরে আর কাজে লাগে না টি শার্টগুলো। একটা একটা ভাঁজ করছে আর ভাবছে। প্রথম প্রথম অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হওয়ার সময় অনেক ভালো লাগা ছিল। নামীদামী সব রেস্টুরেন্টে হওয়া ওয়ার্কশপ, সেমিনারগুলোতে যেত খুব এক্সাইটমেন্ট নিয়ে, নিজের চিন্তার কথা বলতো। আলোচনা সভা হতো, অতিথিরা বক্তৃতা দিতেন, ক্যামেরায় তা ধারণ করে টিভিতে প্রচার করা হতো। সবইকে বুফে খাওয়ানো হতো। প্রতিবারই নতুন টি শার্ট দেয়া হতো ,ফটোসেশান হতো, পত্রিকায় সেই ছবি আসতো। প্রতিবারই বলা হতো তোমাদেরকে নিয়ে পথশিশুদের জন্য অমুক কাজ করা হবে,তমুক কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে- কিন্তু এখন পর্যন্ত একবারও ডাকা হয় নি কোনো কাজের জন্য।কতশত ফরম যে পূরণ করেছে তার আর ইয়ত্তা নেই, শীঘ্রই  যোগাযোগ করা হবে - বলে ইমেইল এসেছে অর্ধশত। কিন্তু সেই "শীঘ্রই" নামক পিরিয়ডটা আর শেষ হলো না । অরগানাইজেশানগুলোর এই লোক দেখানো কাজ গুলো এখন বড্ড বিরক্ত লাগে। সবই ভাওতাবাজি। কোন পদে ছিল তাও মনে নেই। 

সাকিব আর রাকিব লাইব্রেরির সেই সিঁড়িতে বসে আছে। হাতে বেলুনগুলো নেই। আছিয়াকে দেখেই ছুটে এলো, বেলুন সব বিক্রি করা হয়ে গেছে, আছিয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিল। আছিয়া হাতের ব্যাগটা ওদের দিকে এগিয়ে দিলো। ব্যাগটা মিডিয়াম সাইজের অনেকগুলো টি শার্টে ভর্তি, ওদের গায়ে একটু বড় হবে, কিন্তু অতোটা খারাপ লাগবে না। আছিয়ার মা আসার পথে দু-সেট নতুন শার্ট প্যান্ট কিনে দিয়েছেন- সেগুলোও আছে! খুশিতে ছেলে দুটো আছিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছেন মিসেস রহমান। মেয়েটা যে কবে এতো বড় হয়ে গেছে,কবে থেকে যে আশেপাশের মানুষগুলোর কথা এভাবে শিখেছে- এতো কাছে থেকেও তিনি বুঝতে পারেন নি!

No comments