জলাভূমি | হাসিবুল হোসাইন
একটি সময় ছিলো, যখন মাথার উপরে খোলা আকাশ দেখা যেতো। এক ফালি খালি আকাশ- মেঘযুক্ত বা মেঘমুক্ত। মানুষ ছিলো সে আকাশে অনবরত ওড়ার স্বপ্ন দেখতে থাকা শঙ্খচিল। যদিও আকাশ বেদখল হয়েছে ক্রমাগত, আর এসব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যেই বোধহয় উপরওয়ালা কি এক মহামারীকে রূপ দিয়ে পাঠালেন। রাস্তাঘাট খালি হয়ে গেলো, মাঠ জনশূন্য হয়ে পরে থাকলো, মানুষের কোলাহল থেমে গেলো, অবশ্য অসংখ্য ধরণের দূষণ, অনাচার কিছুটা হলেও বন্ধ হলো। দুনিয়াজুড়ে কেবল ঐ শঙ্খচিল আর হাজারো পাখিরই আনাগোনা শুরু হলো, মানুষের সে আশা এক মহামারীর কৃপায় পূরণ হলো বলা চলে।
মহামারী নিয়ে দেশ আর বিশ্বে যে ভয়াবহ দুর্যোগের সৃষ্টি, তার ভেতরেও একজন মানুষ আছেন, বেশ আশ্চর্যের। যদিও সমাজ তাকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করেনি। গরম হোক আর শীত, সারা বছর গায়ে এক বড় উলের সোয়েটার আর সাদা ধুতি, সাথে মাথায় মোটা একটি কাপড়। আরো বলতে গেলে- ইয়া বড় বড় রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি-গোঁফ, আর উসকোখুসকো চুল, থাকেন শুকিয়ে যাওয়া এক জলাভূমির একটি কোণে, ঘাসের ওপরেই। বৃষ্টিদিনের জন্যে একটি ছাউনির মতো বানিয়েছেন কি এক উপায়ে, যদিও তাতে যে কয়টি ছিদ্র আছে তা ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। তার দুনিয়ায় তিনি নিতান্তই একা, কিন্তু আশেপাশে অনেক প্রাণীর সমাহার সে ছোট্ট দুনিয়ায়। দেখা যায় দিনে রাতে- হাঁস, মুরগি, ছাগল, কুকুর, কাকসহ আরও কতো প্রাণী। আর কিছু তো রাতের বেলায়ও নিশ্চিন্তে তার পাশে ঘুমায়, বোধহয় কোনো এক তৃপ্তি বা প্রশান্তি পায় তারা।
মহামারির দিনগুলোয় যখন মানুষ রসদ মজুদ, বন্দীদশায় কেমনে থাকবে, কি করবে, কীভাবে দু বেলা খাবার জুটবে- এসব দুশ্চিন্তায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই এ মানুষের কোনো প্রকার চিন্তাই দেখা যায় না। দিব্যি শুয়ে পড়ে, খেয়ে না খেয়ে, খোলা আকাশের নিচে, চাঁদের জোৎস্না আর বসন্তের বাতাসের ঘ্রাণে- নির্লিপ্ত এক জীবনের দেখা মেলে এ জলাভূমির প্রান্তরে। কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখে, কিছুক্ষণ লকডাউন ভেঙে এলাকায় চক্কর দিয়ে আসে, আবার এসে কিছুক্ষণ তার সঙ্গী প্রাণীদের সাথে গল্পগুজব করে শুয়ে পড়ে, নেই কোনো ভাইরাস সংক্রমণ বা কোয়ারেন্টাইনের চিন্তা।
ঈশ্বর কোথায় থাকেন, কোথায় তার ঠিকানা তা জানা নেই। কিন্তু মানুষটিকে দেখলে মনে হয়- এই তো তার স্বর্গ, কোনো দুঃখ নেই, জরা নেই, ক্লান্তি নেই, ভয় কিংবা তাড়া নেই। অদেখা এ স্বর্গ তৈরি করেই তো তার এ জীবন সার্থক বলা যায়, যা স্বয়ং মহামারি কিংবা দুনিয়ার উর্ধ্বে।
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete